ব্যাচেলর জীবনের সবচেয়ে বড়ো কষ্টের বিষয় হলো
নিজের রান্না নিজে করে খেতে হয়। যদি আপনি অন্য কারো অর্থাৎ বুয়াদের উপরে ভরসা করে
থাকেন তাহলে কখনো তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারবেন না। কেউ ব্যাচেলর হয়ে জন্ম নেয় না।
আমাদের দেশে প্রত্যেক মা মাত্রই অমৃত রান্না করেন। আর এ রান্না খেয়ে অভ্যস্ত আমরা
বুয়ার রান্নায় খুশি থাকবো তা হতে পারে কি?
কিন্তু উপায় না থাকলে কি আর করা? কেউ
ভয়ে রান্না করেন না, আবার কেউ রান্না করতে পারেন না তাই রান্না করেন
না। আমার নিজের ব্যাচেলর জীবনের শুরু হয় ঢাকার বনশ্রীতে একটি অভিজাত ফ্ল্যাট
বাসায়। রান্না এবং বাজার করা এ দুটো বিষয় তখন থেকেই শিখতে হয়েছে। কথায় বলে না?
"কেউ দেখে শিখে আর কেউ ঠেকে শিখে.."
আমাদের দেশের মেয়েরা সম্ভবত মায়েদের রান্না
দেখে দেখে শিখে নেয় আর ছেলেরা ঠেকায় পড়লে নিজেরা রাধুনী-র ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে
যান। আর যারা ঠেকায় পড়লেও নিজে রান্না করেন না তারা হয় বুয়ার হাতের কচু/ঘেচু খেয়ে
দিন পার করেন নতুবা তিন বেলা নুডুলস অথবা ভাত আর ডিম ভাজি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে
থাকেন।
এই কয় বছরের ব্যাচেলর জীবনে আমি অনেক পদের
রান্না শিখেছি। কিছু শিখেছি বড়ো ভাইদের কাছ থেকে, কিছু বন্ধুদের
কাছ থেকে আবার কিছু নিজের রান্নার এক্সপেরিমেন্ট থেকে। এইসব এক্সপেরিমেন্টের ফলে
কখনো রান্না হয়েছে অমৃত আবার কখনো নিজেই সে রান্না খেতে না পেরে ফেলে দিতে
হয়েছে। কখনো আবার আম্মাকে মোবাইলে কল দিয়ে রেসিপি জেনে নিতে হয়েছে।
আমার মতে রান্না শুধু একধরনের শিল্প নয় তার আগে
রান্না যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ন হবার সমতুল্য সাহসের কাজ। রান্নার সাহস নিয়ে
রান্নাঘরে গিয়ে কিছু একটা করে ফেলুন। দূর্ঘটনাক্রমে সেটা যদি খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে
যায় তাহলে নিজেকে বাহবা দিন এবং আরো ভালো করার চেষ্টা করুন। আর যদি খারাপ কিছু
হয়, তাহলে সেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে নতুন কিছু রাধুন!!!
ব্যাচেলর দের রান্নায় উৎসাহিত করার জন্য আজকাল
বিভিন্ন বই বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া ওয়েব ঘাটলেও আজকাল অনেক রেসিপিতো হাতের
নাগালেই। রান্নার ঝোক মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি দেখে আমি আজকাল বেশ পুলকিত হই।
কোন মেয়ে বন্ধুর সাথে রান্না নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা পুডিং, কেক,
পায়েস, সেমাই ইত্যাদি রান্না করতে পারে বলে গর্ব করতে
থাকে। কিন্তু যখন টাকি মাছের ভর্তা, কোরাল মাছের কাবাব, তান্দুরি
চিকেন, মেথি দিয়ে বেগুন রান্না, টমেটোর টক, চালতার খাট্টা
ইত্যাদির প্রসঙ্গ আসে তখন চুপসে যায়।
স্বীকার করছি উপরোক্ত রান্নাগুলো আমি কয়েকমাস
আগেও পারতাম না। এখন কিভাবে পারছি? প্রবাদে আছে "জ্ঞাণ লুকিয়ে রাখতে
নেই, প্রকাশেই জ্ঞান বাড়ে।" কথা আসলেই সত্য!!! আপনারা রান্না করবেন
আমি খেয়ে বলবো "বেশ ভালো হয়েছে", এর এখানেইতো
আমার সার্থকতা। উপরের ঘটনাগুলো উপলব্ধি করেই এক বড়ভাই নিজের চমৎকার সব রান্না
নিয়ে লিখে চলেছেন তার ব্লগসাইট। যেখানে তিনি বাঙ্গালী খাবার রান্নার রেসিপি এমন
ভাবে সাজিয়েছেন যে, যেকেউ এই রেসিপি ফলো করে হতে পারে পাকা
রাধুনী। প্রায় ২ বছর আগে একবার কোন এক রান্নার রেসিপি নেটে খুজতে গিয়ে এ সাইট এর
সন্ধান পেয়েছিলাম। তারপর আবার ভুলে যাই বা হারিয়ে ফেলি ঠিকানা। কয়েকমাস আগে টক
রান্নার রেসিপি খুজতে গিয়ে আবার খুজে পাই এই সাইট এর। ঠিকানাটি চটপট নোট করুন>>
http://udrajirannaghor.wordpress.com/
ভয় কে জয় করুন, নিজে রান্না করুন এবং সুস্থ্য থাকুন।
সুস্থ্য থাকতে ভালো খাবারের বিকল্প নেই।
Blogger Comment
Facebook Comment