আমার ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বর্তমান শিক্ষার হালচাল (সমাজের প্রতি আবেদন পত্র )







আমি কুমিল্লার বিখ্যাত(!) ভিক্টোরিয়া কলেজ এর বাধ্যগত ছাত্র। যাই হোক, সর্বপ্রথম আমি আমার শিক্ষা-পরিচিতি দিয়ে নেই। আমি বর্তমানে এই কলেজের বিবিএস(পাস) ১ম বর্ষের ছাত্র এবং সেই সাথে অন্যত্র CAT(Certified Accounting Technician) পড়ছি। যেটি বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত চার্টার্ড একাউন্টিং কোর্স। আমি যখন ক্লাস নাইন এ পড়ি তখন থেকেই এই প্রফেশনাল কোর্স নিয়ে পড়ার জন্য নিজেকে তৈরী করে নেই। যাই হোক এবার আসল কথায় আসি। অন্যদের মত আমার বাপও চাননি আমি এই কুকুর-বিড়াল কোর্সে পড়ি (সংক্ষেপে CAT বলেই আব্বাজানের এই উপাধি)।


অনেক অনুরোধ এর পর তিনি একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, আর তা হল আমাকে সরকারী ইউনিভার্সিটিতেও পড়তে হবে।

যেহেতু আমার টার্গেট শুধুমাত্র CAT এবং ACCA করার তাই ইচ্ছে করেই আর কোন ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিলাম না। কিন্তু বিবিএস এ পড়তে তো আর পরীক্ষা লাগে না, তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ভর্তি হতে হলো এই ভিক্টোরিয়া কলেজে। যথারীতি ক্লাস শুরু হলো দুই জায়গাতেই। আমিও ব্যাস্ত হয়ে গেলাম পড়ালেখা নিয়ে। কিন্তু বিপত্তি বাধলো তখনই যখন CAT এর পড়ার সাথে বিবিএস এর পড়ার কোন মিল দেখছিলামনা। এখানে এসেই আমার চোখ খুলে গেলো! আমি অনুধাবন করলাম এতোদিন আমরা(এইচ.এস.সি পর্যন্ত) কি শিখেছি? CAT তে শুধুমাত্র তাই শেখানো হয় যা আমাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনে প্রয়োজন। আর আমরা অন্যান্য গতানুগতিক ধারায় শিখে আসি ইহার সংজ্ঞা, উহার প্রয়োজীনয়তা, এনার সঙ্গে তেনার পার্থক্য, উমুক বিষয় সম্পর্কে কোন বিজ্ঞজন কি বলেছেন.. ইত্যাদি ইত্যাদি।


আমি একাউন্টিং এর ছাত্র, তাই শুধুমাত্র আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, আমরা ক্লাস নাইনে যে পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষণ শিখেছি, ক্লাস টেন এ এসে শুনি আগের পদ্ধতি ভুল এবার নতুন পদ্ধতি গেলানো শুরু। এভাবে কলেজ পর্যায়ে এসে দেখি আগের সব পদ্ধতিই নাকি সনাতন! এবার আবার নতুন পদ্ধতির আগমন! শিক্ষার্থীরাও নাম্বার পাবার জন্য আর উচ্চবাচ্য না করে গিলতে থাকে। প্রয়োগিক জ্ঞান আর তাত্ত্বিক জ্ঞান এর মাঝে আমি পার্থক্য করতে পারতাম না যদি না আমি CAT তে না পড়তাম। শুধুমাত্র ব্রিটিশদের সিস্টেমেই না বিশ্বের অন্যান্য সকল জায়গায় সরাসরি প্রয়োগিক জ্ঞান দিয়ে থাকে যাতে একজন শিক্ষার্থী খুব কম সময়ে একজন প্রফেশনাল হিসেবে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমাদের এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।

আর কত শিক্ষার্থী মুখস্ত শিক্ষার বলি হতে যাবে? শুধুমাত্র সার্টিফিকেটই কি সবকিছু? সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট এর জন্য অন্যায় বলি হতে যাবো কেন? প্রফেশনাল দের জন্য যা শেখা জরুরী তা স্কুল থেকেই কেন একটু একটু করে শেখানো যায় না? কোন বিষয়ের সঙ্গা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অথবা কোন মনিষীর কাটকোটঠা বানী শিখে পরীক্ষায় পাশ করা যায় বটে কিন্তু উন্নতি করা যায় না। এখন হয়তো অনেকে বলবেন, "এসব শিখেই তো অনেকে ভালো চাকুরী করছে"। তাতো করছেই, এই যেমন ফিজিক্স থেকে মাস্টার্স করে ব্যাঙ্কের টাকা গুনছেন। আবার যারা বংলাতে অনার্স করেন তারাও ব্যাঙ্কে চাকরী করছেন।

এ পরিবর্তনের জন্য আমাদের গুরুজনদের আগে বোঝাতে হবে। আমি এই ব্লগের মাধ্যমে উনাদের শুধু এটাই বলতে চাই, সময় এখন অনেক পরিবর্তীত হয়েছে। ভবিষ্যত পৃথিবী এখন শুধুমাত্র দক্ষদেরই দেখতে চায়, কোন মূর্খ ডিগ্রিধারীদের নয়। তবে আমি কোন ডিগ্রির বিপক্ষেও যাচ্ছিনা। প্রয়োজন শিক্ষানীতি বদলের। যখন শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুখস্ত শিক্ষনীতি পরিবর্তনের উপর জোর দিয়েছিলেন তখন আমরা কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। কারন তখন আমরা ভাবতাম মুখস্ত করে পার পেলেই হয়। কিন্তু এখন আমি ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কিত কারন এভাবে চলতে থাকলে হয়তো ভুরি ভুরি A+ আসবে কিন্তু মেধার সঠিক বিকাশ ঘটবে না।

লেখাটি এখানেও প্রকাশিত হয়েছে > >  বাংলাদেশের শিক্ষা
Share on Google Plus

About Muntasir

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 মন্তব্য(গুলি) :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Pages

copyright by@ muntasironline. Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Blog Archive