শিক্ষক: বলতো ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক কে?
ছাত্র: (অনেকক্ষণ ভেবে) স্যার গত বছর ছিলেন জিয়াউর রহমান, তবে এ বছর মনে হয় শেখ মুজিবুর রহমান (ছাত্রের গম্ভীর উত্তর)।
আপনারা যারা স্কুলে পড়েছেন, সবাই বোধ হয় কমবেশী এ ধরনের সমস্যায়ও পড়েছেন। এমনকি স্কুলের স্যারেরাও নিশ্চয়ই সরকার বদলানোর সাথে সাথে স্বাধীনতার ঘোষক বদলানোর সূত্রও শিখিয়ে দিয়েছেন! অগাস্ট মাসের শুরুতেই পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য মিডিয়াতে শোনা গিয়েছিল বর্তমান আওয়ামী সরকার ইতিহাস নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা জানি সেটি স্বাধীনতার ঘোষণা কেন্দ্রিক যা প্রত্যেকটি সরকার পালা বদলের পর করে থাকে। ভাগ্যিস জামায়াত সরকার এখন পর্যন্ত এককভাবে সরকার গঠন করেনি!
প্রতি অগাস্ট মাসেই কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে দারুনভাবে উত্তপ্ত থাকে বাংলাদেশের রাজণীতি।
সেগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য একটি বিতর্ক হচ্ছে "স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক কে ছিলেন?"
প্রথমে বিবেচনা করা যাক স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষকের বিষয়টি
বিশ্ব ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যাবে যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। যেমন: খৃষ্টপূর্ব ৩৩১-এ আলেকজান্ডার দি গ্রেট যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন পারস্যের ড্যারিয়াসকে। খৃষ্টপূর্ব ৪৩১-এ স্পার্টা ও এথেন্সের মধ্যে হয়েছিল পিলোপনেশিয়ান যুদ্ধ। ১৩৩৭ খৃষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল শত বছরের যুদ্ধ বা হান্ড্রেড ইয়ারস ওয়ার। ১৮০৩ খৃষ্টাব্দে শুরু হয়েছিল নেপলিয়নের যুদ্ধ যার শেষ হয় ১৮১৫ সালের ওয়াটার্লু-র যুদ্ধে। ১৮৬১ তে হয় আমেরিকার গৃহযুদ্ধ। ১৯১৪ তে প্রথম মহাযুদ্ধ এবং ১৯৩৯ এ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। ১৯৬৫ তে হয় ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধ। ১৯৯৩-এ হয় ইরাকের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ব্রিটেনের অভিযান ও যুদ্ধ।প্রচলিত ইতিহাস পড়লে মনে হবে আমি কেবল যুদ্ধের ইতিহাসই বলছি যার সাথে বক্তব্যের কোন মিল নেই। কিন্তু এসব ইতিহাসের একটু গভীরে গেলেই জানা যাবে কোন যুদ্ধই হঠাৎ করে কোন একটি ঘটনা বা ঘোষনার মাধ্যমে সংগঠিত হয়নি। যে কোন যুদ্ধের আগেই বিভিন্ন ঘটনার ফলে প্রস্তুত হয়েছে একটি প্রেক্ষাপট এবং সেই প্রেক্ষাপটের পরিণতিতে কিছুটা আকষ্মিকভাবে কোন ঘোষণা দিয়ে বা ঘোষণা ছাড়াই, শুরু হয়ে গিয়েছে একটি যুদ্ধ।
সবচেয়ে কাছের ইতিহাসটি বিবেচনা করুন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১-এ নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ারে এবং ওয়াশিংটনে পেন্টাগন ভবন হামলা হওয়ার পর আমেরিকা ঘোষণা করে ওয়ার অন টেরর বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধের উৎস হচ্ছে ১৯৪৮-এ মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের জন্য ধর্মীয় ভিত্তিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র্ প্রতিষ্ঠা। ঐ বছর এপ্রিলে দিয়ের ইয়াসিন নামে একটি গ্রামে আরবদের বিরুদ্ধে ণৃশংস অভিযান চালায় মেনাখেম বেগিন এর ণেতৃত্বে একটি ইহুদী উগ্রপন্থী সশস্ত্র দল। হতাহত হয় শত শত আরব। ভূমিহীণ ও গৃহহীণ হয় হাজার হাজার প্যালেস্টাইনী। আরবদের পক্ষে এগিয়ে আসেন জামাল আবদুল নাসের ও ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ নেতা। প্যালেস্টাইন-আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়তেই থাকে।
এক সময় আমেরিকার সমর্থন ও সাহায্য পায় ইসরায়েল। তাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য টুইন টাওয়ারে এবং ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবন হামলা চালায় মুক্তিকামী প্যালেস্টাইনী-আরবরা। পশ্চিমা মিডিয়াতে যাদের চিত্রিত করা হয় মুসলিম সন্ত্রাসী রূপে। শুরু হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ ঘোষিত ওয়ার অন টেরর যার শেষ দুটি ধাপে ইরাক-আফগানিস্তান এর বিরুদ্ধে শুরু হয় আমেরিকা ও ব্রিটেনের অভিযান ও যুদ্ধ। এই যুদ্ধ এখনো চলছে।
ইতিহাসটি আমি দিলাম এই জন্য যে এতে জানা যাবে ২০০৩-এ ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ৫৫ বছর আগে ১৯৪৮ সালে। বস্তুত কোন যুদ্ধই হুট করে শুরু হয়ে যায় না। যুদ্ধ ঘোষণা সেখানে একটি সূচক চিহ্ন হিসেবে কাজ করতে পারে- নাও পারে।
এই বাস্তবতা মেনে নিলে বোঝা যাবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২৩ বছর আগে ১৯৪৮ সালে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সেদিন যেসব ছাত্র প্রতিবাদের ধ্বণি তোলে, বলা যায় তারাই তাদের অজান্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ঘোষণাটি দিয়েছিল।
এর মাত্র এক বছর আগে ১৯৪৭-এ এই ভূখন্ডেরই মুসলিমরা স্বাধীন পাকিস্তানের পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন। ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঐ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ আরো অনেক মুসলিম নেতা। তবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুধুই যে ধর্ম অণুপ্রাণীত ছিল সেটা বললে এই নেতাদের খাটো করে দেখা হবে। তারা চেয়েছিলেন বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে এবং শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই উপমহাদেশের অনগ্রসর ও বঞ্চিত মুসলিমদের জন্য উন্নয়ন ও সম্ভাবনার সুযোগ তৈরী করতে।
কিন্তু মাত্র একবছর পরেই জিন্নাহ সাহেবের খোঁচায় বাঙালী জাতীয়তাবাদের বীজ রোপীত হয়। এর চার বছর পর ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরের শক্তি যোগায়। সেদিনের ভাষা আন্দোলনের নায়কেরা জানতেন না যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে পূর্ব পাকিস্তানি পুলিশের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষটি ১৯ বছর পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালীদের যুদ্ধে রূপান্তরিত হবে। কিন্তু তাই হয়েছিল।
১৯৫৭-তে কাগমারি সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী হুশিয়ারী করে বলেন, এই ভূখন্ডের দাবী-দাওয়া মেনে না নিলে, আসসালামু আলাইকুম বলে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে পূর্ব পাকিস্তান।
১৯৪৭-১৯৫৭। মাত্র দশ বছর এর ব্যবধানে বাঙালী মুসলমানদের পরিবর্তিত চিন্তাধারার বহি:প্রকাশ ঘটে শুধুমাত্র একটি বাক্যে: আসসালামু আলাইকুম। কিন্তু তখনো মাওলানা ভাসানী জানতেন না যে একদিন সত্যিই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আসসালামু আলাইকুম বলে, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
১৯৬৫-তে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে লন্ডনে অবস্থানকারী বাঙালী ছাত্ররা বুঝতে পারে তাদের মাতৃভূমি পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত অবস্থায় আছে। এবং সে বিষয়ে ইসলামাবাদের পাকিস্তানী শাসকরা মোটেও বিচলিত নয়। লন্ডন প্রবাসী ছাত্রদের মধ্যে এর কিছুকাল আগে থেকেই শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ বিষয়ে চিন্তাভাবনা। এই বিষয়ে তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক একটি বই Unhappy East Pakistan লেখেন স্কুল অফ ইকনমিক্স এর ছাত্র কবিরউদ্দিন আহমদ।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে প্রথম মিটিংটি হয় সেন্ট্রাল লন্ডনে পিকাডিলি সার্কাসের কাছে লক্ষ্ণৌ রেস্টুরেন্টের বেসমেন্টে। উপস্থিত ছাত্র ও ব্যবসায়ী বাঙালীরা সেদিন ১৭ পাউন্ড চাঁদা দিয়ে একটি ফান্ড গঠন করেন। ক্রমেই এদের কর্মতৎপরতা ও কর্মপরিসর বৃদ্ধি পেলে চাঁদা তুলে ইস্ট পাকিস্তান হাউস নামে লন্ডনের কাছাকাছি হাইবেরিতে একটি বাড়ি কেনা হয় যাতে নিয়মিত মিটিং করা সম্ভব হয়। এখান থেকে প্রকাশিত হয় পূর্ববাংলা নামে একটি ম্যাগাজিন। এসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি পূর্ববাংলা মুক্তি সংঘ নামে একটি গোপন সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় যেখানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন ব্যারিস্টার বাদল রশীদ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের এমপি এবং প্রয়াত), ব্যারিস্টার আবুল খায়ের খান, ব্যারিস্টার আবুল মনসুর এবং আলমগীর কবির। সাংগঠনিক কাজে এই সময়ে আরো যারা ভুমিকা রাখেন তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সৈয়দ ফজলে আলী, ব্যারিস্টার লুৎফর রহমান শাহজাহান, ড. আলীম চৌধুরী (একাত্তরে শহীদ) অন্যতম।
এদের তৎপরতা বিষয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ সচেতন ছিল। তাই ১৯৬৬-তে স্বদেশে ফেরার পরেই আলমগীর কবির ও সৈয়দ ফজলে আলী-কে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুকাল জেলে থাকেন।
এই বছরেই, অর্থাৎ ১৯৬৬ তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেশ করে ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী এবং সূচনা করে দেশের স্বাধীকার আন্দোলনের। এর তিন বছর পরে ১৯৬৯-এ হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নতুন প্রেসিডেন্ট হন ইয়াহিয়া খান।
এরপর নভেম্বর ১৯৭০-এর একটি প্রাকৃতিক ঘটনা বিশাল প্রভাব বিস্তার করে তৎকালীন রাজনীতিতে। দক্ষিণ পূর্ব পাকিস্তানে একটি টর্নেডোর ফলে নিহত হয় কয়েক লক্ষ মানুষ। এই ভয়ঙ্কর দূর্যোগের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অথবা পশ্চিম পাকিস্তানের কোন নেতা পূর্ব পাকিস্তানে আসেননি। এর ফলে ১৯৬৫ এর পর বাঙালীরা আবারো বুঝতে পারে তারা কতটা অবহেলিত ও উপেক্ষিত। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তার বহি:প্রকাশ ঘটে ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রথম ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পাকিস্তানের এসেম্বলীতে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করেন। কিন্তু তাদের ইসলামাবাদে যেতে হয়নি। অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যেন ইসলামাবাদে না যান এবং প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ না নেন সেই মর্মে প্রবল জনমত তৈরী হয় এবং বাঙালীর ছয় দফা দাবীর বাস্তবায়ন ও স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা দুর্বার হয়ে উঠে।
৭ মার্চে ঢাকার রেসকোর্সে একটি বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালীর সেই মনোভাবকে একটি চিরস্মরণীয় ভাষণে উপস্থাপন করেন। অনেকের মতে ৭ মার্চের এই ভাষণটি আদর্শিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল। কারন এই ভাষণের পরেই সচেতন বাঙালীরা অণুপ্রাণিত ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে।
এদিকে পাকিস্তান খন্ডন এড়ানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানের নির্বাচিত বৃহত্তম দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আসেন ঢাকায়। আরো আসেন পাকিস্তানের দ্বিতীয় বড় দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-র নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য কয়েকটি দলের নেতা।
এদের আলোচনা চলে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু আলোচনা অমীমাংসিত থেকে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ফিরে যান ইসলামাবাদে। শুরু হয় ২৫ মার্চ রাতে সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে পশ্চিম পাকিস্তান এর সৈন্যদল।
আক্রান্ত বাঙালীরা যখন হতবিহবল হয়ে পড়েছিল তখন ২৭ মার্চে তারা শোনে মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের দু:সাহসিক ঘোষণা। ২৮ মার্চ তারা আবারো শোনে জিয়াউর রহমানের কন্ঠে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা। এটিই ছিল আক্ষরিকভাবে বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা। এই ভাষণের পর বাঙালীরা হয়েছিল আরো উদ্বুদ্ধ ও সংঘবদ্ধ।
৭ মার্চে ঢাকার ঘোষণাটি যেমন আদর্শিকভাবে সত্য- ঠিক তেমনই ২৭ ও ২৮ মার্চে চট্টগ্রামের ঘোষণাও আক্ষরিকভাবে সত্য।
কিন্তু কোন ঘোষকই তাদের জীবদ্দশায় এ জন্য কোন একক কৃতিত্ব দাবী করেননি। করার প্রয়োজনও তারা বোধ করেননি। তারা উভয়ই সচেতন ছিলেন ১৯৪৮-এ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বীজটি রোপিত হয়েছিল। কারন ১৯৫২-র পর থেকে তারা জানতেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, এই স্লোগানটি যে শত সহস্র ছাত্র-যুবক তুলেছিল তাদের প্রত্যেকেই নিজের অজান্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে ছোট কিন্তু বৃহৎ ফলপ্রসু ঘোষণা দিয়েছিল।
এ সবেরই চূড়ান্ত পরিণতি একাত্তরের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ। কোনো একটি বিশেষ ঘোষণা নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কাজ করেছে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৩ বছরব্যাপী আন্দোলনে কোটি বাঙালীর প্রতিবাদী স্বর ও আত্বনিয়ন্ত্রণের ঘোষণা। এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।
উৎস: উপরোক্ত তথ্য ও সময়কাল তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জার্নাল হতে প্রাপ্ত।
আমারব্লগে পূর্বে প্রকাশিত
পাদটিকা:
উপরোক্ত বিশাল কিন্তু নির্জলা সত্য ঘটানবলীর বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে গিয়ে হয়তো কোন কোন জায়গায় ভুল বানান পরিলক্ষিত হতে পারে যা আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এই আশা রাখি।
0 মন্তব্য(গুলি) :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন