কিছু কথা না বললেই নয়...
৪০ বছর বা তারও বেশি সময়ের রাজনীতিতে বাংলাদেশ কি পেয়েছে? অকর্মন্য দল যারা প্রত্যেকে নিজেদের যোগ্য, সৎ মনে করে। তারা খুব ভালো করেই জানে যে তাদের কু-কীর্তি ফাঁস হয়ে গেছে বা হবে কোন না কোন দিন। আর দেশের প্রানপ্রিয় জনগন ও বহুত আলা ভোলা... ভোটের সময় আইলেই একজন আরেকজনের গায়ে ফাল দিয়া উঠেন। কেউ বলে ধানের শীষ কেউ বলে নৌকা। রাজনীতি তে আবার আরো কিছু দল আছে যেগুলান আরো বড় সুযোগ সন্ধানী। কুরবানীর সময় যেমন যৌথভাবে বা শরীক থেকে কুরবানীর প্রচলন আছে ঠিক তেমনই এরাও বড় দলের সাথে শরীক থেকে জনগনের উপর ছুড়ি চালায়। ভোট এর আগে এবং ভোটের সময় জনগন হয়ে উঠে দলগুলোর আল্লাহ্ , ভগবান। ভোট শেষ তো সব শেষ। অনেকটা জনগনের সম্ভ্রম এর সাথেও ব্যাপারটারে তুলনা করা যাইতে পারে। "জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকার" নামে এক বিশেষ চিড়িয়া আছে বাংলাদেশে। বলতে পারেন সেটা কি? সহজ উত্তর সেই চিড়িয়া টা হলোঃ " ভোট "।
৪০ বছর অতিক্রম এর পর এখন পর্যন্ত জনগন বিভক্ত হয়ে আছে ৫২ আর ৭১ এর চেতনা সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে। সহজ করে বলতে গেলে, তাদের বিভক্ত করা হচ্ছে। আঃ লীগ বলে শেখ মুজীব ঘোষনা দিছে, বিম্পি বলে জিয়া দিছে। এই নিয়া হরতাল, অবরোধ , ভাংচুর.... বিরোধীদল দিনেদুপুরে ভাংচুর করে মানুষ খুন করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে ঘোষনা দেয়, "জনগন আমাদের সাথে আছে, হরতাল সফল হয়েছে, জনগন এ সরকার চায় না"। বিরুধী দল খুব ভালো করেই জানে জনগন মারামারি চায় না। তারা চায় দেশের জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় অন্তত সবাই একজোট হয়ে কাজ করুক। কিন্তু বিধি বাম! উত্তর মেরু কে আবদার করলে হয়তো দক্ষিণ মেরুর সাথে মিলিত হবে। কিন্তু আঃ লীগ আর বিম্পির আপোস? নৈব নৈব চ।
আঃ লীগ ইদানিং একটা কথা খুব বেশি বলছে, "মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি"। তাদের ভাষনে মনে হয় যেন, মুক্তিযুদ্ধকে মানলে আঃ লীগে যোগদান বাধ্যতামূলক। হাম্বাগুলার সমালোচনা করতে গেলেই খবর আছে!! চেলাগুলান আপনেরে জামাত/শিবির বানাই ছাড়বে। আপনি যতই হাম্বার সাপোর্টার হন না কেন, আপনি দাড়ি রাখছেন তো মরছেন... আপনি জামাত/যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধী নিয়া কিছু কথা এইবার বলতেই হয়, ইদানিং যুদ্ধাপরাধী একটা বড়সর ইস্যু হয়ে দাড়াইছে। কথায় কথায় যুদ্ধাপরাধী...যুদ্ধাপরাধী...। শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ করছে... আঃ লিগ এর মুখস্ত বুলি, "যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচাল করতে..." ।
৪০ বছরে আমরা শুধু নৌকার উপরে খারাইয়া ধানের শীষ চিবাইয়া গেছি... কেউ আমাদের কোন সমাধানে এগিয়ে আসেনি। নির্বাচনের আগে কেবল "হেন কারেঙ্গা, তেন কারেঙ্গা..." নির্বাচনের পর, "সাদা টাকা, কালো টাকা যা পাই তাই খায়েঙ্গা..." । এই রাজনীতি চক্র আর কতদিন চলবে? এই দেশ থেকে A আর B কে কবে ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারবো আমরা? এটা বুঝতে আর বাকি নেই আমাদের যে Democracy কোন সমাধান না। আর এটাও বুঝতে হবে যে গনতন্ত্র ভগবান না যে, অমান্য করলেই অচ্ছুত হতে হবে। সমাধান চাইলে Pure কিছু দরকার, এমন এক তৃতীয় শক্তির এখন খুব বেশী প্রয়োজন যা সমাধান করবে সকল সমস্যার আর মোকাবিলা করবে হিংস্র রাজনীতির।
মানুষ এখন ভালো মতোই বুঝতে পারছে যে A আর B দুইটাই মুদ্রার এপিঠ, ওপিঠ। এই অবস্থাটা ঠিক কেয়ারটেকার সরকারের সময়ের মতো। মানুষ জানতো এরা খারাপ কিন্তু সমাধান না পাওয়াতে বা না বুঝতে পারার কারনে সেই হাম্বারেই ডাইকা আনছে.. এরপর হাম্বার দুঃশাসন এর ফলে মানুষের জোয়ার বিম্পির দিকে। উত্তরাধিকার সূত্রে সাধারন মানুষ অনেকটা টেনিস বল আর টেনিস প্লেয়ার স্বাভাবিক ভাবেই " A আর B " । গত নির্বাচনে সাধারন মানুষ যারা হাম্বাদের ভোট দিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেছিল, তারাই আবার বিম্পিরে ভোট দিয়া আনন্দ-উল্লাস করবে(যদিও হাম্বারা তা বন্ধ করার জন্য সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এখনই জাতীয় ইস্যু নিয়ে সাধারন মানুষের মাঠে নামা উচিত যা করছে স্বয়ং Democracy এর উৎপত্তিস্থল আমেরিকার সাধারন জনগন। আর দেশের আক্ষরিক অর্থেই গন্ড-মূর্খ তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা সেই Democracy এর সাফাই গেয়ে চলছে। এখন তাদের সঙ্গায় অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তারা এবার এটার নতুন নাম দিয়েছে "সত্যিকারের গনতন্ত্র"।
মানুষ যতদিন পর্যন্ত তথাকথিত Democracy এর গ্যারাকলে হাবুডুবু খাবে, ততদিন পর্যন্ত কোন সমাধান আসছে না। এটা নিশ্চিত। ঔপনিবেশিক ধারা পার হয়েছে সত্য। তবে তা আক্ষরিক অর্থে নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি-র কারনে আমরা এখন আবার সেই আমেরিকা-ব্রিটিশ দের কাছে আটকে পড়েছি। তেল,গ্যাস নিজেদের কাছে থাকা স্বত্বেও এবং তা উত্তোলনের যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও আমরা শুধুমাত্র WB & IMF এর শর্তের কারনেই তা আমরা উত্তোলন করতে পারি না। নিজেরা বিভিন্ন যন্ত্র সামগ্রী উৎপাদনে সক্ষম হলেও আমাদেরকে তাদের বেধে দেওয়া দামে এবং তাদের মনোনীত কোম্পানী থেকে যন্ত্র সামগ্রী আমদানী করতে হয়। ফারাক্কা বাঁধ, টিপাই বাঁধ, ট্রানজিট এর মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতেও জননেতাদের ঐক্যমত দেখা যায়না। এখানেও তারা একে অপরকে হেয় করতেই ব্যাস্ত। হাম্বা'র নেতা রা বলে, "বিম্পির চোট সরকার ফারাক্কা দিছে তাই আমরাও টিপাই বাঁধ দিবাম, টিপাই বাঁধ দিলে বিদ্যুত এর কুন সমস্যই থকবে না।" এদেশের পররাষ্ট্র নীতি টাই আত্বঘাতি। সবার সাথে সুসম্পর্ক করার(!) জন্যই আমরা বিডিআর এর হামলার প্রতিবাদ করলেও কোন ফল হয় না। টনকে টন ইলিশ মাছ কিসের খাতিরে পশ্চিম বাংলা যায়? যেখানে পানির ন্যায্য হিস্যাটুকুও তারা আমাদের দিতে রাজি না? তারা তাদের দেশের স্বার্থ ঠিকই চিন্তা করে। ভারতের নেতারা ঘুষখোর, বাটপার হলেও তারা তাদের দেশের স্বার্থে ঠিকই একজোট! এটা শুধু ভারত না সব দেশের ক্ষেত্রেও এক কথা। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ ই একমাত্র দেশ যেখানে নেতারা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে আগে ভাবে। দেশ যাক রসাতলে...
পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা আছে মাত্র ৩টি। একটি অবাস্তব এবং ধ্বংশ, আরেকটি বাস্তব এবং ষড়যন্ত্রের ফলে ধ্বংশ আরেকটি হচ্ছে বর্তমান ব্যবস্থা যার অন্য নাম "শোষন"। সমাধান আপনার হাতেই ... অনুধাবন করাটা আপনার দায়িত্ব।।।
এর আগে পোষ্ট করেছিলাম প্রথম আলো ব্লগে >> http://prothom-aloblog.com/posts/8/147482
Blogger Comment
Facebook Comment